টবে শশা চাষ করার পদ্ধতি | How to cultivate cucumber in tub
How to cultivate cucumber in tub
টবে শশা চাষাবাদ করার পদ্ধতি
শসা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন সবজি। শশার বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis sativus এটি কিউকারবিটাসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। শশা শুধুমাত্র সালাদে নয় সবজি হিসাবেও খাওয়া হয়। শশার উপাদানের ৮০ শতাংশ পানি থাকে। আমাদের দেশে শশা সালাদের তালিকার প্রথমে রাখা হয়ে থাকে। এছাড়াও শশা রূপ চর্চার জন্যেও ব্যবহার করা হয়। আসুন জেনে নেই বাসা বাড়িতে টবে শশা চাষ পদ্ধতি।
টবে শশা চাষ করার পদ্ধতি |
শশার জাত নির্বাচন
বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ কয়েক ধরণের শশার জাত চাষ করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ জাতই হাইব্রিড। পটিয়া জায়ান্ট বিএডিসি বারোমাসি ও নামের ২ টি স্থানীয় জাত রয়েছে। বেসরকারী বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গুলো বেশ কয়েকটি বিশুদ্ধ জাত ও হাইব্রিড জাত বাজারজাত করছে। শশার বিভিন্ন জাতের মধ্যে-
- আলভী
- কিরিণ
- তিতুমির
- নওগ্রা গ্রীন
- হিমেল
- গ্রীন ফিল্ড
- বাশখালী
- মধুমতি
- শিলা
- লাকি-৭
ইত্যাদি জাত সমুহ আমাদের দেশে চাষ করা হয়ে থাকে।
শশা চাষের জন্য মাটি তৈরি
শশা উৎপাদণের জন্য উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। দুই ভাগ মাটি আর একভাগ পচাঁ গোবর বা ভাল মানের কম্পোষ্ট সার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে এই মিশ্রণের সাথে সামান্য ছাঁই মেশাতে পারেন। টবে সফলভাবে ফলন পেতে হলে পর্যাপ্ত জৈব সার দিতে হবে। রাসায়ানিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী করা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
শশা চাষে টবের সাইজ
ড্রামে বা টবে শসা চাষ করলে সর্বনিম্ন টবের সাইজ ১২”×১২” হতে হবে। এরকম একটি টবে ১-২ টি চাড়া রোপণ করা যাবে।
শশা চাষের সময়
শশা চাষের উপযুক্ত সময় ফ্রেবুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। তবে হাইব্রিড জাত গুলো সারা বছরই বপণ করা যায়।
বীজ বা চারা রোপ
শশার বীজ বপণের জন্য ২৪ ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুন গভীরে বীজ বপণ করতে হবে। চারা রোপনের উপযুক্ত সময় বিকালবেলা, তাহলে চারা কম মরবে। চারা লাগানের পরে চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে টিপে দিতে হবে।তারপর টবে পানি দিতে হবে।
শশা গাছের যত্ন
যে টবে বীজ রোপণ করবেন তার নিচের দিকে ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি বের হতে পারে। চারা গজানের এক সপ্তাহ পর থেকে পরিমাণ মতো তরল সার প্রয়োগ করতে হবে এবং পাত্রের মাটির পরিমাণ অনুযায়ী পাঁচ দানা করে টিএসপি দিয়ে, টবের কিনারার দিকে মাটি আগলা করে দিতে হবে। শশা গাছে সকাল-বিকাল পানি দিতে হবে।
তরল সার প্রস্তুতি ও প্রয়োগ
আধা লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম সরিষা খৈল ভিজিয়ে ১৫
দিন রেখে দিতে হবে। এবার এই ভেজানো খৈল দশ লিটার পানিতে দুই চা-চামচ ইউরিয়া এবং এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে টব প্রতি ৫০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত প্রয়োগে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
শসার রোগ বালাই দমন
শশা চাষে রোগ বালাই দমন করার ২ টা পদ্ধতি আছে
1. রাসায়নিক পদ্ধতি
2. প্রাকৃতিক পদ্ধতি
শশা চাষে পোকা দমনের রাসায়নিক পদ্ধতি
১. ফ্রুট ফ্লাই কচি শসা এর মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং গাছের কচি কড়া পচে ঝড়ে পরে। এই সমস্যা উপশম করতে ছাই ছিটিয়ে দিন অথবা ডায়াজেনন প্রয়োগ করুন।
২. গাছ বড় হয়েছে কিন্তু ফুল কম ধরে এরকম হলে টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করুন। গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না এমন হলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন। আপনাকে গাছের অবস্থা দেখে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ছত্রাক নাশক ব্যবহার এর প্রয়োজন হলে ডায়াজনন বা ইউনিসাফ ব্যবহার করতে পারেন।
শসা গাছের মাছি পোকা দমন
পোকা ফল ছিদ্র করে ফলের ভেতর ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে ঐ ফলের মধ্যে জন্মায় এবং ফল পঁচে যায়৷ এই পোকা দমনের জন্য কচি ফল কাগজ, কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে৷ ফল বড় হওয়ার পর যখন খোসা শক্ত হয় তখন আর এই পোকা ফল ছিদ্র করতে পারেনা৷ ক্ষেতে পোকার আক্রমন বেশি বৃদ্ধি পেলে সাড়ে ১২ লিটার পানিতে চা চামচের ২ চামচ-পরিমাণ ডিপটেরেক্স ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে৷ তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ঔষধ-ছিটানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কোনো ফসল বাজারে বিক্রি বা খাওয়া যাবে না৷
শসা গাছের পাউডারিমিলিডিউ রোগ
এই রোগে পাতার উপর সাদা পাউডার এর মত দেখা যায়, হাত দিয়ে ধরলে পাউডার এর মত উঠে আসে । এর কারণে গাছ দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং ফলন হ্রাস পায়৷ এই রোগটি দূর করতে ২ গ্রাম পরিমাণ থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউপি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভাল করে পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে৷ বড় ক্ষেতে প্রতি বিঘার জন্য ১২০ গ্রাম ঔষধ দরকার৷ হবে৷ ঔষধ প্রয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে কোন ফসল সংগ্রহ করা বা খাওয়া যাবে না৷
শসা গাছের আনথ্রাকনোজ রোগ
এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পাতায় হলদে দাগ হয়, পরে দাগগুলো বাদামি বা কালো হয়ে ঐ অংশ পচে যায়৷ ফলের বাইরের আবরনে এই বাদামি দাগ দেখা যায় ও ফল পচে যায়৷ এর প্রতিকারের জন্য বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ শোধণ করতে হবে৷ ১ সের বীজ ২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ নামক ঔষধ দ্বারা উত্তমরূপে মিশিয়ে নিন ৷ তাছাড়া রোগ অতিরিক্ত দেখা দিলে ডায়থেন ৪৫ গ্রাম ১০ লিটার পরিমাণ পানির সংগে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷ ক্ষেতে রাসায়নিক ঔষধ দেবার অন্তত সাত দিন পর্যন্ত ঐ ক্ষেতের ফসল বিক্রি অথবা খাওয়া যাবে না ৷ এই রোগ দমনের জন্য ঘরে তৈরি বোর্দ মিশ্রণ আক্রান্ত গাছে ছিটানো যেতে পারে৷ এক শতাংশ জমির জন্য এই বোর্দ মিশ্রণ তৈরির করতে সাড়ে সতেরো লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম পাথুরে চুন ও অন্য সাড়ে সতেরো লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম তুঁতে আলাদা আলাদা ভাবে মাটির পাত্রে মিশাতে হবে৷ পরবর্তীকালে এই দুই মিশ্রণ পুনরায় অপর এক মাটির পাত্রে ভালোভাবে মিশাতে হবে এবং আক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে ৷ ১৫ দিন পর পর এভাবে নতুন মিশ্রণ তৈরি করে ছিটাতে হবে৷ ফসল তোলার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে
রেড পামকিন বিটল পোকা
শশা গাছে রেড পামকিন বিটল পোকা আক্রমণ করে থাকে। এরা পাতা, ফুল ও কচি ফল খেয়ে নষ্ট করে দেয়।েএ রোগে আক্রান্ত হলে পোকা গুলো মেরে ফেলতে হবে। সাবান গুলিয়ে অথবা নিমবীজের দ্রবণ স্পে করলে এ পোকার আক্রমণ কমে যায়।
শশা চাষে পোকা দমনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি
১. আপনার শসার মাচায় পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিন । পাখি ক্ষতিকর সব পোকা খেয়ে এর দমন করতে সহায়তা করে।
২. এছাড়া ফেরোমন ফাঁদ পাওয়া যায় বাজার থেকে এগুলো কিনে এনে ব্যবহার করলে ফলের মাছি পোকা এর মধ্যে ধরা পড়ে।
৩. জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, শসা গাছের রোগ বালাই দমন করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের কীটনাশক নিম পাতা সেদ্ধ করে বা গাঁদা ফুলের পাতার রস থেকে তৈরি করা যায়। এছাড়া নিমের তেল স্প্রে করেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীট পতঙ্গ দমন করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে নিমের তেল কিনতে পাওয়া যায়। শসা গাছের রোগবালাই দমন।
৪. বিষ টোপ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিষ টোপ তৈরি করার জন্য ১০০ গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সাথে ১০০ গ্ৰাম পানি দিয়ে ০.২৫ গ্ৰাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন বিভিন্ন রকম পোকা এর মধ্যে আসবে এবং মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটি পরিবর্তন করে দিতে হবে।শসা গাছের রোগবালাই দমন।
ফসল সংগ্রহ
সাধারণত গাছ লাগানোর ৩-৪ মাস পরে ফসল সংগ্রহ করা হয়।