আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার Falling Mango Burds Problem & Solution

আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার
Causes and remedies for falling mango buds

আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার

আম গাছে মুকুলের মধ্যে থাকে হাজার হাজার ফুল। তা থেকে জন্ম নেয় আমের গুটি। কিন্তু গাছে গুটি আসার পর নানা কারণে তা ঝরে যায়। তাই এসব কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা জরুরি-

আমের মুকুল ঝরে পড়ার কারণঃ

বেশ কয়েকটি কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়তে পারে-

১. অতিরিক্ত কুয়াশা, বৃষ্টি, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে।
২. মাটিতে রসের অভাব হলে।
৩. হপার পোকার আক্রমণে।
৪. আমের মুকুলে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ হলে।

আমের মুকুল ঝরে পড়া রোধে করণীয়ঃ

* আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে। 

* মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত ডাল, পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 

* এছাড়া গাছের নিচ থেকে মরা পাতা কুড়িয়ে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

* এ সময়ে গাছের গোঁড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সেচ দিতে হবে।

* আম গাছে মুকুল আসার আগে ও ফল মটরদানার মতো হলে হপার পোকা দমনের জন্য স্প্রে করতে হয়। সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি (রিপকর্ড, রেলোথ্রিন, সিনসাইপার, ফেনম, বাসাড্রিন ) বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রুপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

* পাওডারী মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

* অ্যানথ্রাকনোজ রোগের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি প্রোপিকনাজল (টিল্ট) বা ১ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (করজিম/অটোস্টিন/ ফরাস্টিন) বা ২ গ্রাম ডাইথেন এম৪৫ মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

* আম মারবেলের মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লক্ষণীয়: গাছে যখন ৫০% ফল ধরবে; তখন কোনো প্রকার স্প্রে করা যাবে না। মুকুল ফোটার পর স্প্রে করা যাবে না। কেননা এ সময়ে অনেক উপকারী পোকা পরাগায়নের জন্য আসে।


আমের ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ

আমের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ১৯৯৫ সাল থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জ এর বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্য করা যায়। এর পর প্রায় প্রতি বছর এ পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। বর্তমানে আম চাষীদের নিকট এ পোকা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।

ক্ষতির ধরণঃ

আম মার্বেল আকারের হলেই এ পোকার আক্রমন শুরু হয় এবং আম পাকার পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার উপর ডিম পাড়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়া খুব ছোট বিন্দুর মত আম ছিদ্র করে আমের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং আমের শাঁস খেতে থাকে। পরে আটি পর্যন্ত আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানটি কাল হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর আক্রমণের ফলে পচন ধরে যায়। বেশী আক্রান্ত আম ফেটে যায় এবং গাছ থেকে পড়ে যায়।

প্রতিকারঃ

ক) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং গাছের মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। ফলে পোকার আক্রমণ কম হবে। 

খ) আম বাগান নিয়মিত চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে 

গ) পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়া মাত্র ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে অথবা কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। এক্ষেত্রে হারভেস্ট-এ ভাল ফল পাওয়া যায়।


আমের শোষক বা হপার পোকার আক্রমণের প্রতিকারঃ

আম গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে চটচট শব্দে যে পোকা আমাদের গায়ে পড়ে সেটাই শোষক বা হপার পোকা। এ পোকা আমের মুকুলের রস শুষে খেয়ে ফেলে । এছাড়া এ পোকা আম্র মুকুলের রস খেয়ে,বিষ্ঠা ত্যাগ করে আঠালো ধরনের মধুরস,যার সাথে ফলের পরাগরেণু আটকে গিয়ে পরাগায়ন ব্যহত হয় এবং এ রসের সাথে ছত্রাক জন্মে কালো হয়ে যায়,যাকে বলে “মহালাগা”। 

পূর্নাঙ্গ কীট বাদামী বর্ণের এবং দেখতে কীলকাকৃতি বা ত্রিকোনাকার হয়ে থাকে। এদের শুককীট ও একি রকম আকৃতির হলেও আকার ও গায়ের বর্ণ এ ভিন্নতা রয়েছে। এরা উপযুক্ত স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে মোটা ঝোপঝাড় ধরনের গাছে বেশি আক্রমণ করে। শুককীট ও পূর্নাঙ্গ কীট উভয়েই গাছের ক্ষতি করে থাকে। এদের আক্রমণের সবচাইতে উপযুক্ত সময় হচ্ছে জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং মে হতে জুলাই।

আমের হপার পোকাঃ

শুককীট ও পূর্নাঙ্গ কীট গাছের বিভিন্ন অংশে যেমন পাতা, ফল, ফুল এ একধরনের ছিদ্র করে ও টিস্যুরস শুষে নেয়। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। পাতা, ফুল, ফল, ডালপালা শুকিয়ে যায়। গাছ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং বাদামী বর্ণ ধারণ করে। এছাড়াও এরা একধরনের লালা ক্ষরণ করে যা অন্যান্য পোকাকে আকৃষ্ট করে এবং এক ধরনের কালো রং এর ছত্রাক বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

ছোট গাছ মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হলে এরা যখন বড় হয় তখন আর ফল দিয়ে থাকে না। ফলে কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।

প্রতিকারের উপায়ঃ

ক) আমের বাগান প্রায়ই চাষ করে ও আগাছা নির্মূল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

খ) আমের গাছ ঘন ভাবে রোপণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গ) জমিতে যাতে আবদ্ধ পানি না থাকে এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ না থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।

ঘ) অধিক্রমনকৃত গাছগুলো ছেঁটে ফেলে দিতে হবে।

ঙ) নিম দিয়ে আমের হপার দমন করা সম্ভব।

চ) বাগানে সূর্যের আলো প্রবেশ করার সুযোগ দিতে হবে।

ছ) ফুট পাম্প দিয়ে কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে।

জ) Cypermethrin 10EC অথবা Lamda cyhalothrin 2.5EC প্রতি এক লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার করে মিশিয়ে নিতে হবে।

ঝ) অথবা Actara 25WG প্রতি এক লিটার পানিতে আধা মিলি অথবা Admire 200Sl প্রতি এক লিটার পানিতে আধা মিলিলিটার মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।

ঙ) Sumicidin 20EC অথবা Fentox 20EC প্রতি এক লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
close